বিষ্ময়কর ড্রাই ওয়াটার
রসায়ন
Posted on
ডিএনএ, গুরুত্বপূর্ণ এই বায়োমলিকিউল এর আবিষ্কারের কীর্তি অনেকেই দিয়ে থাকেন জেমস ওয়াটসন এবং ফ্রানসিস ক্রিককে। রসায়নের ইতিহাস পরিক্রমায় ডিএনএ উদঘাটনের কীর্তি গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো ঘটনা কেন্দ্রিক , হেলিক্সের মতোই এর আবিষ্কারের রহস্যও সময়ের সাথে সাথে নিয়েছে বিভিন্ন বাক ; শেষ পরিণতি আজকের সর্বজনস্বীকৃত ডাবল হেলিক্স কাঠামো।
![Rosalind Franklin](https://lh3.googleusercontent.com/8fLChjoE_je38ajNdenisaZKrDlg_7JanIw1d13t5Fx0fWCsfRjfweaGdg99Tz3PE_sBTJBT4hIoSIEfUFOWsxUnOE4vkG1F723hAoni4duQYyDScQqpPP1nfJAURFgBVJ9VAZc37UVR5rqBzG0n8vtbBBb3409xQxKoqM6VkC2uTw_-cp5_Tlst =220x300)
শুরুটা হয়েছিল আরও ১০০ বছর আগে সুইস কেমিস্ট ফ্রেডরিখ মিশারের কাজের সূত্র ধরে।মিশারের প্রথমবারের মতো ডিএনএ পর্যবেক্ষণ ছিল বায়োলজিক্যাল সাইন্সের জন্য অনেকটাই আশীর্বাদস্বরূপ যা পরবর্তীতে ফোবাস লিভেন এবং এরুইন শারগফের মতো সাইন্টিস্টদের ডিএনএ তথা নিউক্লিক এসিডের উপর গবেষণা কর্ম সাধনে চমৎকার প্রেরণার উৎসরুপে কাজ করেছে ।
ফ্রেডরিখ মিশার যে বছর শ্বেত রক্ত কণিকায় প্রথম ডিএনএ পর্যবেক্ষণ করলেন, সে সময়টাকে এখনো জেনেটিক রিসার্চের ক্ষেত্রে ‘Landmark’ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে মিশারের এই কাজের মাধ্যমে এই বায়োমলিকিউল কিন্তু প্রথমেই ডিএনএ নামে পরিচিত হয় নি, এর নাম মিশার দিয়েছিলেন নিউক্লিন; নিউক্লিনে এসিড সদৃশ ধর্ম দেখতে পান অল্টম্যান, যার দরুণ পরবর্তীতে এর নাম হয়ে যায় নিউক্লিক এসিড।শ্বেত রক্ত কণিকা বা লিউকোসাইটের প্রোটিন বিশ্লেষণ ছিল মিশারের গবেষণা কাজের মূল উদ্দেশ্য; ডিএনএ তথা নিউক্লিনের উপস্থিতি ছিল তাই অনেকটাই অপ্রত্যাশিত।
কাজের সুবিধার্থে লিউকোসাইট এর খোঁজে সংগ্রহও করে ফেললেন রোগীর ক্ষত স্থানে ব্যবহৃত ব্যান্ডেজ আর পুজ সহ গজ। এগুলো থেকে সংগ্রহ করা লিউকোসাইট এক্সট্রাক্টের বিশ্লেষণে প্রোটিন অণুর উপস্থিতি মিশার পেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু একটি বিষয় তাকে বেশ ভাবিয়ে তুললো- লিউকোসাইটিক নিউক্লিয়াসে এক ধরনের পদার্থ দেখা যাচ্ছে যার ধর্ম কোনো সাধারণ প্রোটিনের মতো তো নয়ই বরং এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের ফসফরাস কনটেন্ট এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রচলিত উপায়ে প্রোটিওলাইসিস করার কয়েকবার চেষ্টাও করলেন মিশার- না, তাও হলো না!!বারংবার চেষ্টার পর ব্যর্থতায় মগ্ন না হয়ে মিশার রাত দিন কাজ করতে থাকলেন। অবশ্য ব্যাপারটাকে একদিক থেকে অতোটা উপেক্ষাও করতে পারলেন না, খানিকটা আত্মবিশ্বাস থেকেই তার মনে হলো কোনো নতুন জৈব অণুর সন্ধান তিনি পেতে চলেছেন। রিসার্চ ফাইন্ডিংস এর গুরুত্ব অনুধাবন করে তিনি লিখেছিলেন, “আমার কাছে মনে হয়, কোষে নিউক্লিন নামক এক ধরণের অণুর উপস্থিতি বেশ সক্রিয় যাদের মধ্যে ফসফরাস কনটেন্ট এর সামান্য ব্যত্যয় থাকতে পারে তবে অণুগুলোকে প্রোটিন অণুর সমতুল্যও বলা যায়।”
মিশারের নিউক্লিন তথা নিউক্লিক এসিডের আবিষ্কারের গুরুত্ব তৎকালীন সংশ্লিষ্ট মহলে আশাজনকভাবে অনুধাবিত না হলেও পরবর্তীতে বড় বিজ্ঞানী মহলে সমাদৃত হতে কেটে যায় ৫০ বছরেরও বেশি। এ প্রসংগে এরুইন শারগফের এক প্রবন্ধ বিশ্লেষণে দেখা যায়, শারগফ উনিশ শতকের বিজ্ঞানের ইতিহাসে নিউক্লিক এসিড গবেষণায় চার্লস ডারউইন, থমাস হাক্সলের মত খ্যাতিমান বিজ্ঞানীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করলেও ফ্রেডরিখ মিশারের কথা আকস্মিকভাবে একবারও উল্লেখ করেন নি।
বিশ শতকের কাছাকাছি নিউক্লিনের রাসায়নিক প্রকৃতি নিয়ে নতুন ধারায় কাজ শুরু করেন আরও কয়েকজন বিজ্ঞানী , ততোদিনে মিশারের গবেষণার কৃতিত্ব প্রায় ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে। এদের মধ্যে অগ্রগামী রাশিয়ান বায়োকেমিস্ট ফোবাস লিভেন, বায়োলজিক্যাল মলিকিউলসের উপর যিনি ওই সময় ৭০০ রও অধিক গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছিলেন। একক নিউক্লিওটাইড অণুর ক্রম শনাক্তকরণে, RNA-DNA র মধ্যে পার্থক্যকরণে এবং এসব অণুতে রাইবোজ ও ডিঅক্সিরাইবোজের উপস্থিতি শনাক্তকরণে তিনি ছিলেন অন্যদের জন্য পথিকৃৎ।
লিভেনের আগে সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের এটা জানা ছিল না যে DNA র প্রতিটি নিউক্লিওটাইড একটা আরেকটার সাথে ত্রিমাত্রিক স্থানে কীভাবে সন্নিবেশিত থাকে। এতো অধিক সংখ্যক নিউক্লিওটাইড গ্রুপ যারা কেবল নিজেদের মধ্যে বন্ড করতে পারে এক্ষেত্রে তাদের সজ্জিত হবার অসংখ্য পন্থা থাকাটাই স্বাভাবিক- এরূপ অনুমানের ভিত্তিতে অনেকেই অনেক রকম মডেল প্রস্তাব করলেও শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি লাভ করে লিভেনের পলিনিউক্লিওটাইড মডেলটিই। ইস্টের নিউক্লিক এসিডের উপর কয়েকশো পরীক্ষা চালিয়ে লিভেন যে মতবাদ প্রদান করেন সেটা ছিল অনেকটা এরকম যে, নিউক্লিক এসিডগুলো অসংখ্য নিউক্লিওটাইড অণুর সমন্বয়ে তৈরি এবং প্রতিটা নিউক্লিওটাইড অণু আবার নাইট্রোজেন বেইস-শ্যুগার-ফসফেট গ্রুপ এই ট্রায়োর সমন্বয়ে তৈরি।১৯ শতকের শুরুতে প্রস্তাবিত এই মডেলে লিভেন উল্লেখ করেন যে, নতুন তত্ত্ব বা প্রমাণাদির সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে প্রচলিত নিউক্লিক এসিডের গঠন কাঠামোয় ভিন্নতা আগামী গবেষণাগুলোতে স্পষ্ট হতে পারে , তবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই যে নিউক্লিক এসিডগুলো একেকটা পলিনিউক্লিওটাইড।
গুরুত্বপূর্ণ আরও একটি গবেষণা এ সময় চলছিল পলিনিউক্লিওটাইড চেইনে নিউক্লিওটাইডগুলোর ক্রম শনাক্তকরণের উপর। একেবারে আলাদা না হলেও, লিভেন তার মডেলে টেট্রানিউক্লিওটাইড চেইনে নিউক্লিওটাইডের একটা সুনির্দিষ্ট ক্রম নিয়ে কথা বলেছিলেন যেটাকে এখনকার রীতিতে সাংকেতিকভাবে প্রকাশ করলে দাঁড়াবে, G-C-T-A-G-C-T-A….। লিভেনের নিউক্লিওটাইড ক্রমের সুনির্দিষ্টতা অতিসাধারণ হওয়ায় কয়েকজন বিজ্ঞানী এটাও ধারণা করেন যে নিউক্লিওটাইডের এই ক্রম কোনো নির্দিষ্ট সিকোয়েন্স অনুসরণ করে না বরং এদের সজ্জিত হওয়া সম্ভব আরও ভিন্ন কয়েকটা উপায়ে।লিভেনের পলিনিউক্লিওটাইড মডেলকে সমর্থন জানিয়ে ডিএনএর আরও বিস্তারিত ও সূক্ষ্ম বর্ণনা এবার দিতে চেষ্টা করেন এরুইন শারগফ, বলা যায় শারগফের এই কাজ ছিল ওয়াটসন-ক্রিকের গবেষণার জন্য অনেকটাই ক্যাটালিস্টের মতো। শারগফের এরূপ প্রেরণার সূত্র যে তবে কেবলই লিভেনের রিসার্চ ফাইন্ডিংস, এমনটা সরাসরি বলা হয়ত ঠিক হবে না।
তৎকালীন সময়ে রকফিলার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অস্টওয়াল্ড এভারি তার এক রিসার্চ পেপারে বলেছিলেন,বংশগতির অন্যতম উপাদান জিনগুলো ডিএনএ র সমন্বয়ে তৈরি, গঠনগত একক হিসেবে ডিএনএ র সূক্ষ্মগঠন ও বিন্যাস উন্মোচিত হলে অদূর ভবিষ্যতে জেনেটিক্স এ কত বড় ধারণাগত পরিবর্তন যে ঘটতে চলেছে- তার গুরুত্ব শারগফ এখান থেকেই হয়তবা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। নিউক্লিক এসিড নিয়ে কাজ করতে গিয়ে শারগফের টিম বিভিন্ন প্রাণি প্রজাতির ডিএনএ সংগ্রহ করে তাদের মধ্যে তুলনামূলক কাঠামোগত শ্রেণিভেদের চেষ্টা করে। অবশেষে ১৯৫০ সালের দিকে তারা দুই ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হনঃ প্রথমত, ডি এন এ অণুতে নিউক্লিওটাইডগুলোর সজ্জা প্রজাতিভেদে পরিবর্তনশীল। দ্বিতীয়ত, নিউক্লিওটাইড ক্রমের ভিন্নতা সত্ত্বেও সব ধরনের ডিএনএ অণুতে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সাধারণ বৈশিষ্ট্য বলতে তারা বুঝিয়েছিলেন যে, সব ধরনের ডিএনএ অণুতেই এডিনিন ও থায়ামিন,গুয়ানিন ও সাইটোসিন বেইস জোড়ার পরিমাণ সমতুল্য। এমনকি পিউরিন বেইস ( এডিনিন ও গুয়ানিন) এবং পাইরিমিডিন বেইস ( সাইটোসিন ও থায়ামিন) এর মোট পরিমাণও প্রায় কাছাকাছি।শারগফের দ্বিতীয় সিদ্ধান্তকেই মূলত এখন আমরা শারগফের রুল হিসেবে জানি। তবে পিউরিন ও পাইরিমিডিন বেইস জোড়ের আনুপাতিক সম্পর্কের যে ব্যাখ্যা শারগফ দিতে পারেন নি, তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয় রোজালিন্ড ফ্রাংকলিন-মরিস উইলকিনসনের এক্স রে ক্রিস্টালোগ্রাফিক ওয়ার্ক আর ওয়াটসন ও ক্রিকের পাজেল মডেল এপ্রোচের মধ্য দিয়ে ।
১৯৫১ সাল, ডেনমার্কের ন্যাপলিসের এক কনফারেন্সে উইলকিনসন ডিএনএ স্ট্রাকচারের উপর করা এক্স রে ক্রিস্টালোগ্রাফিক ফটোগ্রাফ প্রদর্শন করেছিলেন, Photo 51 নামে খ্যাত এ ফটোগ্রাফটি ছিল ফ্রাংকলিনের নেচারে প্রকাশিত আর্টিকেল থেকে নেয়া। ওই কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন তরুণ গবেষক ওয়াটসনও, উইলকিনসনের প্রদর্শিত ক্রিস্টালোগ্রাফিক ইমেইজ ওয়াটসনকে অনেকটাই দ্বিধান্বিত করে । ছবিতে ডি এন এ ডাবল হেলিক্স মডেলের প্রত্যক্ষ নিদর্শন না থাকলেও এতে কিছু জোরালো ক্লু দেখলেন ওয়াটসন, যদিও ডিএনএ সুত্রক সংখ্যা, অণুর রাসায়নিক গঠন কাঠামোজনিত সূক্ষ্ম পরিমাপের অনেক কিছুই ছবিতে স্পষ্ট বোঝার উপায় ছিল না।ক্যামব্রিজের ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে এ সময় কাজ চলছিল ক্রিস্টালোগ্রাফি ভিত্তিক আরও কিছু প্রজেক্টের। এদের মধ্যে একটি ছিল হিমোগ্লোবিন ও মায়োগ্লোবিন স্টাডি নিয়ে, ম্যাক্স পেরুটয আর জন কেনড্রিউর সাথে সেখানে কাজ করছিলেন ফ্রানসিস ক্রিকও। প্রজেক্টের থিসিস পেপার লিখবার সময়ই ক্রিকের সাথে দেখা ওয়াটসনের। সমসাময়িককালে কেমিক্যাল বন্ডিং নিয়ে কাজ করা লিনাস পলিং এর বল স্টিক মডেল এপ্রোচের অণুকরণে বিভিন্ন মডেল নিয়ে কাজ শুরু করলেন এই দুই গবেষক ।
গঠন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ওয়াটসন-ক্রিকের এরুপ ‘3D model approach’ কে গবেষণাগত সীমাবদ্ধতার ফলাফল হিসেবেও দেখেন কেউ কেউ। তাদের মতে, ওয়াটসন-ক্রিকের কাছে ক্রিস্টালোগ্রাফির জন্য উচ্চমানের ডিএনএ স্যাম্পল না থাকায় ডিএনএ র আনুমানিক (hypothetical) গঠন বর্ণনার জন্যই ভৌত মডেলের সাহায্য নেন তারা।ক্রিস্টালোগ্রাফিক ডাটার অপ্রাপ্তির এই কথা একেবারে অপ্রাসঙ্গিক নয়; ডাটাগুলো নিয়ে ওয়াটসন ক্রিকের আগেই অবশ্য কাজ করেছিলেন ফ্রাংকলিন যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ডিএনএ সূত্রকে পর্যায়বৃত্তিক গ্রুপগুলার মধ্যকার দূরত্ব, মনোক্লিনিক ইউনিট সেলের মাত্রা- ডিএনএর পরিপূরক সূত্র দুইটির সহাবস্থান তথা ডাবল হেলিক্স মডেল প্রমাণ করবার জন্য যা যথেষ্ট। এই তথ্যের সত্ত্ব ফ্রাংকলিনের কাছে সংরক্ষিত থাকলেও অনেকটা তার অগোচরেই পেরুটযের মারফত ডাটার রাফ কপি পৌছে যায় ওয়াটসন ক্রিকের কাছে।
মজার ব্যাপার ছিল এই যে, এ ঘটনার আরও দু বছর আগে কিংস কলেজের এক সেমিনারের লেকচারে ফ্রাংকলিন যে ডাটা প্রদর্শন করেছিলেন সেগুলোর সাথে এই ডাটার ছিল হুবহু মিল, আর এ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ওয়াটসনও। অর্থাৎ ওয়াটসন ক্রিকের এই রিসার্চ ফাইন্ডিংস আরো দু বছর আগে পাওয়া সম্ভব ছিল।একই সময় কাজ করছিলেন লিনাস পলিং তার ট্রিপল ডিএনএ হেলিক্স মডেল নিয়ে কিন্তু সফলতার কাছাকাছি গিয়েও শেষ পর্যন্ত ভুল প্রমাণিত হয় এই মডেলটি। প্রথমদিকে এক্স রে ডিফ্রাকশন ডাটা এবং শেষমেষ বল স্টিক মডেলের সাহায্য নেন পলিং। পলিং এর মডেলের ত্রুটি ছিল ফসফেট গ্রুপের অবস্থান নিয়ে, মডেলে দেখানো হয়েছে শ্যুগারের বেইস অংশটি বাইরের দিকে থাকায় ফসফেট গ্রুপগুলো নিজেদের মধ্যে বন্ড তৈরির মাধ্যমে হেলিক্স তৈরি করছে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এটা অদ্ভুত একটা ব্যাপার কারণ ঋণাত্বক চার্জবিশিষ্ট ফসফেট গ্রুপগুলো এভাবে বন্ড করতে থাকলে নিউক্লিওটাইডগুলোর মধ্যে বিকর্ষণ বলের যে উদ্ভব ঘটবে তাতে করে হেলিক্স এর অস্তিত্বই থাকার কথা না।
ফ্রাংকলিনের ডাটা নিয়ে কাজ করবার সময় ক্রিক লক্ষ্য করলেন, তার এ যাবত করা গবেষণায় হর্স হিমোগ্লোবিনের জিনে ডিএনএ র মনোক্লিনিক ইউনিট ডাটা ফ্রাংকলিনের সাথে অনেকটাই মিলছে। ডাটা ইন্টারপ্রিটেশন এর পূর্ব অভিজ্ঞতা ক্রিককে শক্তপোক্তভাবেই অনুমান করতে সহায়তা করে ডিএনএ সূত্রকের জোড়ায় জোড়ায় অবস্থানের নেপথ্যের কারণ, যা ফ্রাংকলিনের পক্ষে করা সম্ভব হয় নি। ফ্রাংকলিনের ল্যাব নোটবুক ঘেটে যতদূর অনুমান করা যায় তিনি সংগ্রহকৃত ডাটার জটিল ম্যানিপুলেশনের প্রয়োজনীয়তা সে সময় বুঝতে পারেন নি।ফ্রাংকলিনের ডাটা বিশ্লেষণের পর যথারীতি ভৌত মডেলও তৈরি হলো!ডাবল হেলিক্স মডেলের ক্যালকুলেশন ব্যতীত ডিএনএ সূত্রকের সহাবস্থান নিয়ে ফ্রাংকলিনের কিছু অনুমান হেলিক্স স্ট্রাকচারের সমর্থনে কাজে দেয়। যেমন,প্রথমত ডিএনএ সূত্রকদ্বয়ে নিউক্লিওটাইডগুলোর সজ্জাক্রম এমন যে সূত্র দুইটি একে অন্যের পরিপূরক ( আধুনিক পরিভাষায় ‘ডিএনএ রেপ্লিকেশন’ এর পূর্বশর্ত ধরা হয় এটিকে)দ্বিতীয়ত নিউক্লিওটাইডের সজ্জাক্রমে অনির্দিষ্টতা যা প্রজাতিভেদে ডিএনএ বৈচিত্র্যতাকেই নির্দেশ করে।
তবে এ সিদ্ধান্তসমূহের কোনোটিকেই ম্যাথমেটিকাল বা কেমিক্যাল মডেলে উপস্থাপন করবার জন্য পর্যাপ্ত সময় তখন ছিল না কারণ ততোদিনে ওয়াটসন ক্রিকের ডাবল হেলিক্স মডেল পরিচিতি পেতে যাচ্ছে।ওয়াটসন ক্রিকের প্রস্তাবিত এই মডেল প্রদর্শনে ফ্রাংকলিন উইল্কিনসনকে পরে আমন্ত্রণও জানানো হয়। এর প্রতি সমর্থনও জানান ফ্রাংকলিন। তবে ফ্রাংকলিনের ডাটার উপর ভিত্তি করে ওয়াটসন ক্রিকের প্রস্তাবিত যেই মডেলের জন্য তাদের নোবেল পুরষ্কার প্রদান করা হয় , ফ্রাংকলিনের নাম তখনও থেকে যায় উপেক্ষিত।
তথ্যসূত্রঃ