বিষ্ময়কর ড্রাই ওয়াটার
রসায়ন
Posted on
বর্তমান বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের বদৌলতে আমাদের এর বিকল্প ভাবতেই হচ্ছে। বছর কয়েক পর জ্বালানি সংকটে যে পড়তে হবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। বিশ্বে যে পরিমাণ তেল-গ্যাস-কয়লার মজুদ আছে তা দিয়ে হয়তোবা আমরা আরো একটা শতক পার করতে পারব। কিন্তু তারপর? এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!!
তবে বিজ্ঞান বসে নেই । উন্নত বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প খুঁজতে।
কেমব্রিজ এর রসায়ন বিভাগের একদল গবেষক তেমনই একটি ডিভাইসের ধারণা দিয়েছেন । এই ডিভাইসটি সূর্যালোক, কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানি থেকে তৈরি করবে কার্বন-ফ্রি জ্বালানী এবং তাও কোনো প্রকার বিদ্যুৎ এর উপস্থিতি ছাড়াই।
এই ডিভাইসটিকে বলা যায়, কৃত্তিম সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা কিনা অন্যান্য সকল উদ্ভিদের মত সূর্যালোককে শক্তিতে রূপান্তর করতে পারবে।
প্রকৃতপক্ষে এটি এক ধরনের উন্নত ‘Photosheet’ টেকনোলজির ভিত্তিতে কাজ করে যার মাধ্যমে সূর্যালোক, কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানি, অক্সিজেন এবং ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়। সহজেই সংরক্ষণযোগ্য ফরমিক এসিডকে সরাসরি বা হাইড্রোজেনে রুপান্তর করেও ব্যবহার করা যায়।
Nature Energy জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে উঠে আসে, কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে ক্লিন ফুয়েল রুপান্তরের পদ্ধতি। ওয়্যারলেস এই ডিভাইসটিতে স্কেলিং এর ব্যবস্থা আছে এবং একে সোলার ফার্মের মত অন্যান্য এনার্জি ফার্মেও ক্লিন ফুয়েল উৎপাদনে ব্যবহার করা যাবে বলে গবেষকরা মনে করছেন।
প্রসঙ্গত, ক্লিন ফুয়েল হলো সেই সব জ্বালানি যারা অপেক্ষাকৃত কম গ্রীনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন করে। CNG, LPG র নাম আমরা সবাই শুনেছি, এগুলোও কিন্তু ক্লিন ফুয়েল।
কার্বন নিঃসরণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যাপক ব্যবহার হ্রাসকরণের উদ্দেশ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে ক্লিন ফুয়েল তৈরিতে সৌরশক্তির এ ধরনের ব্যবহার নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় । তবে, কোনো রকম উপজাত( বর্জ্য ) ছাড়াই এ ধরনের ক্লিন ফুয়েল উৎপাদনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন গবেষকেরা।।
”কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াতে সর্বোচ্চ মাত্রার সিলেক্টিভিটি অর্জন করা আসলে কঠিন একটি ব্যাপার, যাতে আপনি কোনো রকম বর্জ্য ছাড়াই সৌরশক্তির সর্বোচ্চ রূপান্তর ঘটাতে পারেন”, বলেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক Dr. Qian Wang.
এ_র সাথে গ্যাসীয় জ্বালানি সংরক্ষণ এবং উপপজাতকে পৃথকীকরণও জটিল হতে পারে। অধ্যাপক Erwein Reisner জানান, তারা এই জ্বালানীকে তরল অবস্থায় রুপান্তরিত করার চেষ্টা করছেন; কেননা তরল অবস্থায় জ্বালানী সংরক্ষণ ও পরিবহন অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক।_
নিঃসন্দেহে বলা যায় এই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প খুঁজে পাব আমরা । বিজ্ঞানের অর্জনের খাতায় যুক্ত হবে আরেকটি নতুন ও সাফল্যমন্ডিত অধ্যায়।